আজ মঙ্গলবার, ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মাদক ব্যবসায়ী রুমী গ্রেপ্তার, অধরা হাসীরা

দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা নগরীর চাঁনমারী এলাকার আলোচিত নারী মাদক ব্যবসায়ী রুমী আক্তার (২৫) কে অবশেষে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে সদর উপজেলার তল্লা সবুজবাগ এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে নারায়ণগঞ্জ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার কাছ থেকে ৯০ হাজার টাকা মূল্যের ৩০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়। পরে বৃহস্পতিবার রাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. আজিজুল ইসলাম বাদী হয়ে রুমিসহ মাদক সাম্রাজ্যের আরেক পরিচিত মুখ পারভীন ওরফে নাইট পারভীনকে আসামী করে ফতুল্লা মডেল থানায় মাদক আইনে মামলা দায়ের করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রেজাউল হক। তিনি জানান, থানায় মামলা দায়েরের পর সেটির তদন্তের দায়িত্ব নারায়ণগঞ্জ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিপ্তরের উপর দেয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া রুমি আক্তার চাঁনমারী এলাকার আলোচিত মাদক ব্যবসায়ী মুক্কার মেয়ে ও আরেক আলোচিত মাদক ব্যবসায়ী লেবু মিয়ার স্ত্রী।

জানা গেছে, আলোচিত এই মাদক ব্যবসায়ী ও তার পরিবারের প্রত্যেক সদস্যই মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত। রুমী, তার স্বামী লেবু মিয়া, বাবা মুক্কা ও ছোট ভাই ফজল দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত বেশ কয়েকটি মাদক স্পটগুলোতে নিয়মিত মাদকদ্রব্য সরবরাহ করে আসছে। তাদের এমন কার্যক্রমে উঠতি বয়সী তরুন, তরুণী ও মধ্য বয়সী নারীরাও এই কারবারের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে একটি সূত্র থেকে জানা গেছে।

জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সাল থেকে এ বছর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় মাদক আইনে ১৩টিরও অধিক মামলা রয়েছে আলোচিত এই নারী মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। এ বছর ৩টি, ২০১৮ সালে ৪টি, ২০১৯ সালে ৩টি ও ২০২১ সালে ৪টি মাদক মামলার তথ্য প্রমাণ রয়েছে দৈনিক সংবাদচর্চা পত্রিকার কাছে।

মামলা গুলোর পরিসংখ্যান বলছে, বিগত তিন বছর শুধু মাত্র রুমীই নয়, এ সময়গুলোতে দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে মাদকদ্রব্য সরবরাহ করে নারায়ণগঞ্জে প্রবেশের সময় চাঁনমারী এলাকার খোরশেদের স্ত্রী হাসি বেগম, হাফিজুরের স্ত্রী সাজু বেগম, জুলেখা বেগম, সজীবের স্ত্রী নাজমা বেগম, শাহজাহানের মেয়ে মৌসুমি বেগম, সুমন মিয়ার স্ত্রী লাকী বেগম, লাকী বেগমর বোন ময়না বেগম, খোকা মিয়ার স্ত্রী ঝর্ণা বেগম, কাজলের স্ত্রী নাজমা বেগম, হালিমের মেয়ে ও সাজুর স্ত্রী পারভীন, কামালের স্ত্রী সেফালী আক্তারসহ আরো বেশ কয়েকজন নারী মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছিল নারায়ণগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

জেলা পুলিশের একজন পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, চাঁনমারী এলাকার চিহ্নিত নারী মাদক বিক্রেতাদের মধ্যে রুমি অন্যতম হলেও মাদকের এই দুনিয়াতে সম্পৃক্ত হয়ে বহু সম্পত্তির মালিক বনে গেছে হাসি বেগম নামের আরেক নারী মাদক ব্যবসায়ী। শুধু হাসিই নয়, সাজু বেগম নামের আরেক নারী এখনো চাঁনমারী, সবুজবাগ, তল্লা ও খানপুর এলাকায় হেরোইন, গাঁজা ও ফেন্সিডিল সরবরাহ করছে। এছাড়াও নতুন মাদক এলএসডি ও আইসও যুক্ত হয়েছে তাদের পেশায়।
পুলিশের ওই সদস্য আরো জানিয়েছেন, পুরুষের তুলনায় মাদকদ্রব্য বহন ও বিক্রির ক্ষেত্রে নারীদেরকেই নিরাপদ ভাবা হচ্ছে। যার কারণের কথিত স্বামী ও বাবাদের মাদক ব্যবসার ধারাবাহিকতাও পুরুষদের সাথে তাল মিলিয়ে নারী সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি মনে করেন, নগরীর আলোচিত নারী মাদক ব্যবসায়ী রুমী, হাসি বেগম, সাজু বেগম, জুলেখা বেগম, নাজমা বেগম, মৌসুমি বেগম, লাকী বেগম, ময়না বেগম, ঝর্ণা বেগম, নাজমা বেগম, পারভীন, সেফালী আক্তারদের আইনের আউতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবসা করতে পারলে সেটি একটি নিদর্শন হিসেবে কাজ করতো।

নারায়ণগঞ্জ আদালতের একটি বিজ্ঞ আইনজীবী জানিয়েছেন, মাদক ব্যবসায়ীদের দ্রুত জামিন দেয়ার জন্য বেশ কয়েকটি চক্র আদালত প্রাঙ্গনে কাজ করে থাকেন। অনেক সময় তারা আইনজীবীদের মাধ্যমে বাকীতেও আসামী জামিন করিয়ে নেন। শুধু পুলিশ কিংবা সমাজের নাগরীকরাই সচেতন হলে চলবে না। আইনজীবীদেরও এগিয়ে আসতে হবে মাদক নির্মূলের ক্ষেত্রে।

এদিকে আলোচিত মাদক ব্যবসায়ী রুমীর গ্রেপ্তারের পর থেকেই চাঁনমারীসহ তল্লা সবুজবাগ এলাকায় অপর নারী মাদক বিক্রেতাদের গ্রেপ্তারের দাবী জানানো হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, হাসিসহ আরো অন্য নারী মাদক বিক্রেতাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের সম্মুখিন করতে পারলে নারায়ণগঞ্জে মাদকের লাগাম টানা যাবে।